ডাইমেনশন (Dimension) বা মাত্রা আমাদের খুব পরিচিত একটি শব্দ। আমরা অনেক সময় বলি আমরা ত্রিমাত্রিক স্থানে বসবাস করি। কিন্তু আসলেই এই মাত্রা কি ? নিচে প্রত্যেকটা মাত্রা নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়েছে।
0D বা শূন্য মাত্রা
এমন একটি বিন্দু কল্পনা করুন যার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা কিছুই নেই। নেই কোনো অবস্থান। এমন একটি অকল্পনীয় বিন্দু-বস্তুর জগৎ হলো (সহজ ভাষায়) শুন্যমাত্রা।
1D বা প্রথম মাত্রা
মনে করুন একটি (অন্ধকার) ঘরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত একটি সুতা বাধা টান টান করে। এবার সুতার উপর একটি পিপড়া ছেড়ে দিলে পিপড়াটির গতিপথই হবে এক-মাত্রিক জগৎ (ফার্স্ট ডাইমেনশন)। অর্থাৎ পিপড়াটি চাইলে শুধু সামনে অথবা পেছনের দিকে যেতে পারবে। ডানে-বামে কিংবা উপর-নিচে নয়।
2D বা দ্বিতীয় মাত্রা
এবার ধরুন ওই ঘরের মেঝেতে একটি বড় কাপড়ের টুকরো বিছিয়ে একটি পিপড়া ছেড়ে দিলেন। এবার পিপড়াটি সামনে-পিছে যাবার পাশাপাশি ডানে-বামে কিংবা চক্রারে দৌড়াতে পারবে। এক্ষেত্রে পিপড়াটি চলাচলের জন্য একটি ক্ষেত্রফল পেয়েছে আর পিপড়ার এক্ষেত্রে সম্ভাব্য গতিপথই দ্বি-মাত্রিক জগৎ। কেননা এ মাত্রার দুটি দিক (দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ) রয়েছে।
খেয়াল করে দেখুন একাধিক সুতার বুননে যেভাবে একটি কাপড় তৈরি হয় সেভাবেই বলা যায় একাধিক (অসীম দৈর্ঘ্যের, অসীম সংখ্যক) এক-মাত্রিক জগতের পাশাপাশি অবস্থানের মাধ্যমে ১টি মাত্র (অসীম ক্ষেত্রফলের) দ্বি-মাত্রিক জগৎ গঠিত হয়েছে।
3D বা তৃতীয় মাত্রা
অনুরুপভাবে বলা যায় (অসীম ক্ষেত্রফলের) অসীম সংখ্যক দ্বি-মাত্রিক জগৎ একটির উপর আরেকটি অবস্থান করলে ১টি মাত্র ত্রি-মাত্রিক জগৎ গঠিত হবে। আমাদের এই মহাবিশ্ব ত্রি-মাত্রিক। আমরা ত্রি-মাত্রিক প্রাণি। মুলত আমরা আমাদের আশেপাশে যা কিছু দেখতে পাই সবই ত্রি-মাত্রিক। সব কিছুরি ৩ টা মাত্রা রয়েছে (দৈর্ঘ্য,প্রস্থ,উচ্চতা)। একটি গোলাকার ফুটবলেরো ৩ টা মাত্রাই রয়েছে।
4D বা চতুর্থ মাত্রা
অনুরুপ ভাবে আমরা বলতে পারি যে, (অসীম আয়তন বিশিষ্ট) অসীম সংখ্যক ত্রি-মাত্রিক জগতের সহ-অবস্থানের মাধ্যমে ১টি চতুর্মাত্রিক জগৎ গঠিত হয়। শুনতে বেশ অদ্ভুত লাগছে। কল্পনা করতেও কষ্ট হচ্ছে। এ কেমন জগৎ যে জগতে অসীম সংখ্যক ত্রি-মাত্রিক জগৎ বিদ্যমান। যেহেতু আমরা ত্রিমাত্রিক জগতের বাসিন্দা সেহেতু চতুর্মত্রিক জগৎ কল্পনা করা অতো সহজ নয়। আমাদের মস্তিষ্ক অতোটা ভাবতে পারে না।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে চতুর্থ মাত্রাটি কি? দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতার পরে কোনটি থাকবে চার নাম্বারে?
বিজ্ঞানীরা চতুর্থ মাত্রা হিসাবে সময় কে বিবেচনা করেছেন। স্ট্রিং থিওরি অনুযায়ী সময় বলতে বোঝায় যে কোনো মুহুর্তের ক্ষুদ্রতর অবস্থা। অর্থাৎ চতুর্মাত্রিক জগতের বাসিন্দারা চাইলেই মহাবিশ্বের এক স্থান থেকে অপর স্থানে মুহুর্তের মাঝেই ভ্রমণ করতে পারবে "স্থানে"র উর্ধ্বে গিয়ে (অনেকটা ওয়ার্মহোলের মতো)। ভ্রমণের ক্ষেত্রে "স্থান" কোনোরুপ বাধা প্রদান করতে পারবে না।
আরেকটু যদি গভীর ভাবে কল্পনার করি তাহলে এমন দাঁড়াবে যে, একটি চতুর্মাত্রিক জগতে অসীম সংখ্যক ত্রি-মাত্রিক জগৎ এমন ভাবে সহ-অবস্থান করছে যেন মহাবিশ্বের প্রতিটি স্থানের সাথে অন্য (প্রতিটি) স্থান যুক্ত (কানেক্টেড)। যার ফলে এক স্থান থেকে মুহুর্তের মাঝেই অপর স্থানে যাওয়া পসিবল।
অর্থাৎ এখানে জায়গা দখলের বিষয়টি আসবে না। যে চেয়ারে এই মুহুর্তে আপনি বসে আছেন, সে চেয়ারেই আপনার বন্ধু বসে আছে এবং একই সাথে আপনার পরিবারের সকলেই বসে আছে। কেও জায়গা দখল করছে না। বা কোনো বস্তু (matter) অন্য বস্তুকে বাধা প্রদান করছে না।....উফ। বিষয়টা আমাদের কল্পনাকেও হার মানায়।
5D পঞ্চম মাত্রা
এ জগতের বাসিন্দারা স্থানের পাশাপাশি সময়কেও জয় করতে পারবে। অর্থাৎ মুহুর্তের মাঝেই মহাবিশ্বের যে কোনো স্থান হতে অন্য যে কোনো স্থানে ভ্রমণ করতে পারবে। এবং চাইলে একই সাথে সময়ের আগে-পিছে যেতে পারবে। আর এতেই চলে আসে "টাইম ট্রাভেলিং" এর বিষয়টা।
মুলত এ জগৎ হবে অসীম সংখ্যক চতুর্মাত্রিক জগতের সমষ্টি। চতুর্মাত্রিক জগৎ গুলো এমনভাবে অবস্থান করবে যেন, একটা "স্থান এবং সময়" অপর "স্থান এবং সময়" এর সাথে কানেক্টেড। এজগতে চাইলেই টাইম ট্রাভেল করে যে কোনো সময়ে ভ্রমণ করা সম্ভব। বলা যায় যে এ জগতের বাসিন্দারা চাইলেই মুহুর্তের মাঝে ডাইনোসর যুগ কিংবা বিগব্যাং এর সময়টা থেকে ঘুরে আসতে পারবে।
Interstellar মুভির সেই বিশেষ দৃশ্যটিকে 5D হিসাবে বলা হয়েছে।
আর এভাবে ট্রাইম ট্রাভেলিং শুরু হলেই দেখা যাবে কিছু প্যারাডক্সের। যেমন অতীতে গিয়ে নিজের পূর্বপুরুষ কে হত্যা করে রেখে আসলে, ভবিষ্যতের "আমি" কীভাবে জন্মাব? এ প্যারাডক্স গুলোর একাধিক তত্বগত সমাধান থাকলেও মুলত এমনটা হবার সম্ভাবনা বেশী যে, এ জগতের বাসিন্দারা স্থান ও সময় জয়ী হলেও প্রভাব বিস্তারকারী নয়। চাইলেই অতীতে গিয়ে নিজের দাদাকে দেখে আসতে পারবে, তবে কোনোভাবেই কোনো প্রভাব রেখে আসতে পারবে না।
আর যদি প্রভাব রেখে আসে সেক্ষেত্রে প্যারাডক্সের সমাধান কি হবে? এর সমাধান কল্পেই ধারণার সুত্রপাত হয় প্যারালাল ইউনিভার্সের। ট্রাইম ট্রাভেলিং এর মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করলে সময় মোড় নিবে ডানে-বামে যাকে সহজ ভাষায় বলা যায় প্যারালাল ইউনিভার্স।
(মনে করি, আমি এখন A ইউনিভার্সে আছি। ২০২০ সাল চলছে। আমি টাইম মেশিন দারা ৫০ বছর পেছনে গিয়ে বাবার জন্মের আগেই আমি আমার দাদাকে হত্যা করে ২০২০ সালে আমার জায়গায় চলে আসলাম। আমি এসে দেখব যে আমার দাদা এবং বাবা উভয়েই জীবিত। এবং আমিও জীবিত। তাহলে আমি অতীতে গিয়ে কাকে খুন করলাম? এক্ষেত্রে আমি যখন অতীতে ভ্রমণ করেছিলাম তখোন A ইউনিভার্স-ই ছিলো। কিন্তু যখন অতীতকে প্রভাবিত করলাম দাদাকে হত্যার মাধ্যমে তখোনি মুহুর্তের মাঝেই ওই সময়টা থেকেই শুরু হলো আরেকটা নতুন প্যারালাল ইউনিভার্সের। যে ইউনিভার্সে আমার কোনো অস্তিত্ব নেই। অর্থাৎ A ইউনিভার্সে আমি আছি কিন্তু B তে আমি নেই।
প্যারালাল ইউনিভার্স নিয়ে নির্মিত MR. NOBODY মুভিটা দেখতে পারেন।)
6D ষষ্ঠ মাত্রা থেকে উচ্চতর মাত্রা
স্ট্রিং থিওরী অনুযায়ী ১০ টা ডাইমেনশন, M - থিওরী অনুযায়ী ১১ টি, বোসোনিক স্ট্রিং থিওরী অনুযায়ী ২৬ টি পর্যন্ত ডাইমেশন থাকতে পারে। যদিও এগুলো এখনো একটা হাইপোথিসিস (এক্সপেরিমেন্টালি অপ্রমাণিত)। কেননা ৩য় মাত্রায় বসে উর্ধ্বতর মাত্রা প্রমাণ করা চাট্টিখানি কথা নয়। সেগুলো বুঝতে অবশ্যই উন্নত মস্তিষ্কের প্রয়োজন। যা আমাদের নেই।
আমি যতোটুকু বুঝেছি ততোটুকু শেয়ার করলাম। হয়তো অদূর ভবিষ্যতে বিজ্ঞান এগুলো সহজ ভাষায় প্রমান করতে সক্ষম হবে। এবং হয়তো সফল ভাবে শুরু করতে পারবে টাইম ট্রাভেলিং।
Images source: shutterstock.com
0 মন্তব্যসমূহ